সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত
প্রতিষ্ঠাকাল (১৯৭৯)
স্কুলের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড সিএমএইচ ও সেনাসরণির মধ্যবর্তী অংশে ১৪ একর জমি প্রদান করে।এই জমিতে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ভিত্তিপ্রস্থর
স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। উল্লেখ্য,সেই সময় প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া। ১৯৭৯ সালের ২৭ মার্চ তিনি ইংরেজি 'এইচ' আকৃতির দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুভ উদ্বোধন করেন।
প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আমজাদ আহমেদ চৌধুরি,পিএসসি। সূচনালগ্নে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বর্তমান সিএমএইচ এর একটি কক্ষে দশ-বারো জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পাঠদান শুরু করে। সেসময় অষ্ঠম শ্রেণি অবধি পাঠদান করা হতো। প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠু রূপে পরিচালনার জন্য মেজর জেনারেল আমজাদ আহমেদ চৌধুরি, পিএসসি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ হতে দুই জন শিক্ষক(মিঃ শিবেন্দ্রনাথ ভৌমিক ও মিঃ সাজেদুল ইসলাম)কে এই প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত করেন। মিঃ শিবেন্দ্রনাথ ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের জন্য বেগম আমজাদ আহমদ চৌধুরির অনুরোধক্রমে কর্ণেল আলতাফ হোসেনের স্ত্রী মিসেস রিজিয়া আলতাফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁর যোগদানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক স্বল্পতা সাময়িকভাবে দূর হয়।
নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম স্থানান্তর ও শিক্ষক নিয়োগ
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবনের উদ্বোধন করেন। এই নতুন ভবনে ডিসেম্বর মাসের ১১ ও ১২ তারিখে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম হতে অষ্টম শ্রেণিপর্যন্ত ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই মাসের ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র/ছাত্রীদের মৌখিক পরীক্ষা ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে জুনিয়র স্কুল হিসেবে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম।
অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ এবং পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ গঠন (১৯৮০)
শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে স্থায়ী অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৮০ সালের ৮ মার্চ কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষক কাজী আব্দুর রশিদকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। একই বছর ৩ এপ্রিল ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিঃ আব্দুল হান্নানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। বিধিমোতাবেক পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্য ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিভাবক সমাবেশের আহ্ববান করা হয়। উক্ত সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনেরেল আমজাদ আহমেদ চৌধুরী, পিএসসি।
তাঁর উপস্থিতিতে অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়।
নিজস্ব পরিবহণবহর গঠন
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া সদর ও শেরপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই বেসামরিক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হতে থাকে। ১৯৮০ সালে ত্রিশ আসন বিশিষ্ট একটি বাস ভাড়া করে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানের পরিবহণ সেক্টর। কিন্তু এ ব্যবস্থা ছিল প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল। নতুন এই প্রতিষ্ঠানের পরিবহণ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। তারা ত্রিশ আসন বিশিষ্ট একটি বাস বিদ্যালয়কে দান করে। এটি ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রথম নিজস্ব পরিবহণ। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে পরিবহণ বহরে যুক্ত করা হয় আরো দুটি বাস। ১৯৮০ সালের অক্টোবরে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আব্দুল মন্নাফ, পিএসসি। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জিমনেশিয়ামের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবাসন সমস্যার সমাধানকল্পে দুটি চার তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি লাভ (১৯৮১ ) ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে অতিরিক্ত একটি করে শাখা এবং নতুন খোলা নবম শ্রেণি যাত্রা শুরু করে। একই বছর ৭ মে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৮১ সালের ১৬ জুন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আর এ এম গোলাম মুক্তাদীর, পিএসসি। তাঁর উদ্যোগে ১৯৮১ সালে স্টাফ কোয়াটার্স ও হোস্টেলের নির্মাণ কাজ শুরু এবং জিমনেশিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠানকে ক্যাডেট কলেজের অনুরূপ গড়ে তোলা।
প্রথম বোর্ড পরীক্ষা (১৯৮৩)
১৯৮৩ সালে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ হতে প্রথম ব্যাচ রাজশাহী বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এই বছর বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল তেইশ জন। প্রথম বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল শতকরা ৯১.৩০ ভাগ। উল্লেখ্য, সেবছরে সমগ্র দেশে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের যে হার তার প্রেক্ষাপটে দেখলে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক সকুল ও কলেজের এই ফলাফল ছিল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
কলেজ শাখার যাত্রা শুরু (১৯৮৪)
১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়ার কলেজ শাখা । ১৯৮৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় স্কুল শাখা হতে উত্তীর্ণ ও নতুনভাবে কলেজ শাখায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে দুটি শাখা খোলা হয়। যার একটি ছিল বিজ্ঞান এবং অন্যটি মানবিক বিভাগের। এই সময় বিজ্ঞান বিভাগে ৫০জন এবং মানবিক বিভাগে ১৮ জন শিক্ষার্থী ছিল। কলেজ শাখার শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পূর্বে ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে কলেজ শাখার শিক্ষক নিয়োগের জন্য দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই মাসে অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরীক্ষা, এই পরীক্ষায় কৃতকার্যদের মধ্য থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদান করা হয় জীব বিজ্ঞান ও রসায়ন শাস্ত্রের দুই জন প্রভাষক। এঁদের মধ্যে রসায়ন শাস্ত্রের প্রভাষক মোঃ আলী হোসেনকে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দান করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট শিক্ষকগণ নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কলেজ শাখার শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয় ১ অক্টোবর ১৯৮৪ তারিখ হতে বর্তমান স্কুল ভবনের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষে। কলেজ শাখার শুরুতে বিজ্ঞান বিভাগে ০৪ জন, মানবিক বিভাগে ০৪ জন এবং আবশ্যিক বিষয় বাংলায় ০১জন- মোট নয় জন শিক্ষক ছিলেন। উল্লেখ্য, এই সময় ইংরেজি বিষয়ে কোন শিক্ষক ছিলেন না, ক্লাস নিতেন তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ আব্দুল হক। তিনি স্বেচ্ছায় এবং কোন সম্মানী ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন।
প্রথম এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ (১৯৮৬)
১৯৮৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসেন। এ সময় অবকাঠামোগত উন্নয়নকল্পে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। এই অর্থে স্কুল ভবনের তৃতীয় তলার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নবনির্মিত তৃতীয় তলায় কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম ও গ্রন্থাগার স্থানান্তর করা হয়। এই বছর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া হতে প্রথম ব্যাচ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা হতে মোট ৫০ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। উল্লেখ্য, এবছর পাশের হার ছিল শতকরা ১০০ ভাগ।